কক্সবাজারের উখিয়ায় বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত একশত গ্রামের পরিস্থিতি দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। ফলে জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেছে। উপজেলা প্রশাসন ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল হওয়া ব্যবসা-বাণিজ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান পুরোদমে চালু হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত ৩ দিন টানা ভারী বর্ষণ, পাহাড়ী ঢল ও সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে শতাধিক গ্রাম পানিতে সম্পুন্ন রূপে তলিয়ে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।
আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, কক্সবাজারে গত শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় ৪৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড। ভারি বৃষ্টিতে জেলার উখিয়া সহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। গত শনিবার ও রবিবার তুলনামূলকভাবে একটু বৃষ্টি কম হয়েছে। সাগরে ভাটারটান থাকায় পানি দ্রুত সরে যাওয়ায় প্লাবিত গ্রামগুলো স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, জালিয়া পালং ইউনিয়নের নম্বরী পাড়া, ঘাটঘর পাড়া পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া ডেইপাড়া মনখালি, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, মনির মার্কেট, রুমখা পালং,বড়বিল, পাতাবাড়ি,নলবুনিয়া,খেওয়া ছড়ি, বৌ বাজার, কুলাল পাড়া, পাগলির বিল, রাজা পালং ইউনিয়নের কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া তুতুরবিল,হিজলিয়া, পিনজির কুল, রত্না পালং ইউনিয়নের সাদৃ কাটা, পশ্চিম রত্না, বড়ুয়াপাড়া, খোন্দকার পাডা, গয়াল মারা ও পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী তৈল খোলা, আঞ্জুমান পাড়া ফারিবিলসহ শতাধিক গ্রাম পানি তলিয়ে গেছে। চারদিকে পানি আর পানি। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় অনেক গবাদিপশু মারা যাচ্ছে।
জনগণের চরম দুর্ভোগ হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, রুমখা চৌধুরী পাড়া, বউ বাজার, পাগলির বিল, বড়বিল, মনি মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। সবজি ক্ষেতসহ আমন মৌসুমের ধানের চাষাবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় মৎস্য চাষীরা জানান, মৎস্য ঘেরে ও পুকুরে পানি ডুকে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
জালিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম সৈয়দ আলম জানান, সমুদ্র উপকূলীয় ডেইল পাড়া,নম্বরি পাড়া ও ঘাটঘর পাড়ায় কয়েকশো পরিবার পানিতে আটকা পড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন শনিবার ও রবিবার বিভিন্ন ইউনিয়নের পানিতে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভেরিফাই ফেইসবুকে এক জরুরি বার্তায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত জনগণকে নিরাপদ স্থানে কিংবা পার্শ্ববর্তী সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, প্রবল পানির স্রোতে ধান চাষ,সবজি খেত ও পানের বরজ নষ্ট হয়েছে।
গ্রামীন অভ্যন্তরীণ কাঁচা রাস্তা ও কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এটিএম কাউসার। তবে তাৎক্ষণিক ক্ষতির পরিমাণ বলতে পারছে না তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরো জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেনের নির্দেশনায় সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল ও সিপিপি সদস্যরা প্লাবিত এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত মানুষকে নিরাপদ স্থানের সরিয়ে আনতে কাজ করেছে।
প্রতিটি ইউনিয়নে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক ও সিপিপি সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উপজেলা ফোকাল পার্সন আল মুবিন।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র গুলো এখনও খোলা রাখা হয়েছে। সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোকে হট মিলসহ শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে পাশাপাশি শুকনো খাবার ও ত্রান সামগ্রী বিতরণ ও অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন।
পাঠকের মতামত